শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১০

নস্টালজিয়া-১

নিয়ামতপুর থেকে যখন গ্রামে চলে আসলাম খুব খারাপ লাগছিল তখন। সেই আদর, রুমা আপু, রুয়েন ভাইয়া, রোমানা, হুমায়ুন ভাইয়া, রকি, জেসমিন ( আরও অনেকে আছে যাদের নাম ভুলে গেছি ) এদের ছেড়ে একেবারে চলে আসতে মন চাইছিল না একেবারেই। তখন এত ছোট ছিলাম যে অনেক স্মৃতিই মনে করতে পারি না। এই বয়সেই পরিচিত একটা জায়গা ছেড়ে গ্রামে চলে আসার অভিজ্ঞতা অনেক পীড়াদায়ক। খুব খারাপ লাগলেও মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম ।


গ্রামে এসে আবার সঙ্গী জুটল। আমার চাচাত ভাই নাসিম, শহিদুল, রেজাউল ও রোকসানা আপুর সাহচার্যে ভুলে যাবার চেষ্টা অনেকটাই সফলতার দিকে এগোতে থাকল। অনেক মজা করতাম তখন আমরা। রোকসানা আপু ছিল খেলা জমানোতে অত্যাধিক পটু। আমাকে আর নাসিমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। খেলার অনেকগুলো সাথী পেলে তিনি আমাদের গুরুত্বই দিতেন না। অনেকটা ডিকটেটরের মত আচরন করতেন।

আবার যখন সবাই বিদ্রোহ করত, তার সাথে কেউ খেলত না তখন ডাক দিতেন আমাদের, "রনি, নাসিম আয়। আমরা আলাদা করে খেলব। " কি এক অজানা কারণে তার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারতাম না আমরা। সাথে সাথে ছুটে যেতাম। ধীরে ধীরে তার দল ভারি হতে থাকত। একসময় আবার তিনি দলনেতা হতেন, আবার আমাদের অবহেলা, তার পতন, আমাদেরকে আলাদা করে খেলার জন্য ডাকা, আবার তার দলনেতা হয়ে ওঠা চক্রাকারে চলতে থাকত।

আমাদের বিশাল এক পুকুর ছিল তখন। প্রতিবেশী একজনের সাথে গণ্ডগোলের কারণে পুকুরে বাধ দিতে হয়। পুকুরকে আবার সাজানো হয় নতুন আঙ্গিকে। চারদিকে হাজার কয়েক কলাগাছবেষ্টিত পুকুরপাড়টি হয়ে ওঠে এক স্বর্গপুরী। অসংখ্য টমেটো গাছ লাগানো ছিল পুকুর পাড়ে।

টমেটোগুলো আমাদের বিকেলের নাস্তার অমৃতের যোগান দিত। সবাই দুই মুঠ করে চাল চুরি করে নিয়ে বিকেলবেলা পুকুরপাড়ে হাজির হতাম। সেগুলোকে ঘন্টাখানেক পানিতে ভিজিয়ে রাখা হত। রোকসানা আপু, আমেনা, পারভিনেরা তখন ব্যস্ত থাকত সালাদ বানাতে। সেই চালভেজার সাথে সালাদের কম্বিনেশানে তৈরী বিকেলের নাস্তা যতটা না মিস করি তার চেয়ে বেশি মিস করে এই একত্রিত হওয়াটাকে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন